জম্মু-কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমস্টারডামে সম্মেলন
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 6 Nov 2022, 2:32:37 PM
জম্মু-কাশ্মীর এবং বৃহত্তর অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ' নিয়ে আমস্টারডামে দুই দিনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১ ও ২ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামের ভিইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ইউরোপিয়ান সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (ইএফএসএএস) আমস্টারডামের ভ্রিজ ইউনিভার্সিটিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। খবর ডেইলি ক্যাপিটাল মেইলের।
সম্মেলনে জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
সম্মেলনে সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ পাকিস্তান এবং সেন্টার ফর ইরানিয়ান স্টাডিজ এসওএএসের সদস্য, আরইউএসআইয়ের ভিজিটিং ইন্ডিয়া ফেলো এবং ইএফএসএএসের রিসার্চ ফেলো, বরজিন ওয়াঘমার খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী থেকে শুরু করে জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলের ইতিহাসের একটি বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, প্রাক ইসলামিক এবং ইসলামিক সময় থেকে কাশ্মীর পবিত্র অঞ্চল হিসেবে প্রশংসা পেয়ে আসছে। প্রথমে এ অঞ্চল বৌদ্ধধর্ম ও তন্ত্রবিদ্যার পীঠ ছিল। পরে ১৪ শতকে সুফি প্রভাবে এ অঞ্চল ইসলামি ধ্যানধারণার দিকে ঝুঁকে পড়ে। পরে আফগান ও মোগল শাসকদের অধীনে এ অঞ্চলের ইসলামের প্রতি বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়।
এ অঞ্চল কখনোই শক্ত অবস্থানে ছিল না কারণ এ অঞ্চলকে কখনোই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ব্রিটিশ শাসনের সময় ডোগাররা এ অঞ্চল কিনে নেয় এবং পরে এ অঞ্চলের সঙ্গে লাদাখ এবং গিলগিট-বালতিস্তান যোগ করে নিজেদের সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করে।
ওয়াঘমার বলেন, তিনি ধর্মের উপর প্রাধান্য না দিয়ে বলতে চান পাকিস্তানের জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর অল্প হলেও রাজনৈতিক দাবি ছিল। তবে জম্মু-কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তানের প্রভাব ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কমে গেছে। অন্যদিকে সৈন্য মোতায়েন করে জম্মু-কাশ্মীর দখল করা এখন অনেক বেশি ব্যয়বহুল পাকিস্তানের জন্য, যে ব্যয় তারা এ মুহূর্তে করতে সক্ষম নয়। তবে এই অঞ্চল দখলের ক্ষেত্রে পাকিস্তান ধর্মকে শুধু রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করছে।
সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তাবিষয়ক বইয়ের লেখক এবং ভারতের সাবেক রয়টার্স ব্যুরো প্রধান মিসেস মাইরা ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ১৯৪৭-এ ভারত ভাগের আগে এবং পরে জম্মু-কাশ্মীরের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক সত্তাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, এর ভৌগোলিক অবস্থানকে নয়।
১৮৪৬ সালে অমৃতসরের চুক্তির মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের আবির্ভাব ঘটে এবং তা ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টি এবং এ ভিত্তিতেই পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মীরকে দাবি করছে।
অন্যদিকে ভারত চুক্তির ভিত্তিতে আইনগতভাবে জম্মু-কাশ্মীরের ওপর নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করেছে। যদিও আদর্শগত দিক দিয়ে পাকিস্তান ভারত থেকে একটু হলেও এগিয়ে থাকবে তবে আইনগত ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের ওপর ভারতের অধিকারটাই বেশি। তবে এ দ্বন্দ্বের কারণেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়া সেন্টার হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস অ্যাডভোকেসির পরিচালক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, নাসির আজিজ খান, জম্মু-কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ধর্মীয় মতামত এবং অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি এ অঞ্চলে মুসলিম উম্মার প্রতি শোষণের কথা তুলে ধরেন। যার ফলে এ অঞ্চলে ধর্মীয় চরমপন্থা বেড়ে যাচ্ছে এবং পাকিস্তানিদের সন্ত্রাসবাদের প্রতিও ইন্ধন জোগাচ্ছে। তিনি এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের ইয়েমেনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন যেন মানুষ বুঝতে পারে কি করে মুসলিমের ওপর অত্যাচারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির নির্বাসিত চেয়ারম্যান এবং জম্মু-কাশ্মীর ইন্টারন্যাশনাল পিপলস অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল শওকত আলী কাশ্মীরি গণতন্ত্রের সুবিধার কথা তুলে ধরেন।
তিনি যে কোনো পরিস্থিতিতেই জনগণের গুরুত্বের কথা ভেবে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
ইউরোপিয়ান সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (ইএফএসএএস) সভাপতি জুনায়েদ কোরেশি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের ঘটনাটি যদি আজ ইউক্রেনের মতো ইউরোপের কাছাকাছি কোনো জায়গায় ঘটতো তা হলে তা বেশি আন্তর্জাতিক নজর পেত। তবে তিনি এ অঞ্চলের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো আশাবাদী।
সম্মেলনে যেসব ছাত্রছাত্রীরা দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এবং এখানকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানতে চায় তাদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্বের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
share: