রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে বিউটি পার্লার, কলোনিতে গরু-ছাগল!
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 2 Aug 2022, 10:26:30 AM
কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন স্টাফ কলোনির বেশিরভাগ বাসায় থাকছেন বহিরাগতরা। অন্যদিকে নিজ বাসা ভাড়া দিয়ে হাজার হাজার টাকা আদায় করছেন রেলওয়ের একশ্রেণির কর্মচারীরা।
ফলে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগসহ বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহারের কারণে প্রতি মাসে রেলওয়ের গচ্ছা যাচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। রেলের বাসা দখল করে বিউটি পার্লার ও গোডাউন বানিয়ে চলছে ইট-বালুর ব্যবসা। ব্যবহার হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের গুদাম হিসাবেও।
এ ছাড়া কলোনিগুলোতে রয়েছে গরুর জন্য খড় মাড়াই ও বেইলছি পরিত্যক্ত জমি এবং ভবনগুলোতে গরুর খামার করা হয়েছে। এ জন্য মাসিক ভাড়া ছাড়াও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের অগ্রিম টাকা। সব মিলিয়ে রেলের স্টাফ কোয়ার্টার এখন ব্যবহার হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে।
এদিকে রেলওয়ের কোয়ার্টারগুলো জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত থাকায় প্রভাবশালীরা রেলওয়ের কোয়ার্টারে ইউনিট ভেঙে গড়ে তুলছেন বিভিন্ন স্থাপনা। নিয়মানুযায়ী কর্মচারী ছাড়া বহিরাগত থাকার সুযোগ না থাকলেও এ অঞ্চলের ৬০ শতাংশ কোয়ার্টার নিয়ে চলছে এমন রমরমা বাণিজ্য। তদারকি না থাকায় অনেকেই রেলের বাসা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি নন-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল জোনের আওতায় লাকসাম রেলওয়ে জংশন ছয়টি কলোনির মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার কলোনি, লোকো কলোনি, কাঁঠালবাগান কলোনি, নিউ কলোনি, ট্রাফিক কলোনি, স্কুল কলোনিতে ৪০০ কোয়ার্টারের মধ্যে বরাদ্দকৃত ২২০টি, জরাজীর্ণ ১৮০টি, এর মধ্যে মামলা রয়েছে ৩৬টি ইউনিট বা কোয়ার্টারে। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা যায় ভিন্ন।
৬টি কলোনিতে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় এক হাজার ২০০ কোয়ার্টারে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে নিউ কলোনি, কাঁঠালবাগার কলোনি, লোকো কলোনি, স্কুল কলোনি মিলে রয়েছে ৬০০ ও ইঞ্জিনিয়ার কলোনিতে ৪০০, ট্রাফিক কলোনিতে ২০০ ইউনিট বা কোয়ার্টার।
সরেজমিন দেখা যায়, রেলওয়ের কলোনিগুলো প্রায় দেড় শতাধিক অবৈধ দখলে। সেগুলোতে রেলওয়ের কোনো কর্মচারী থাকেন না। জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ইউনিটগুলোতে চলে দিনে-রাত নেশাখোর, মাদকসেবীর আড্ডা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড। কলোনিগুলোতে রয়েছে গরুর জন্য খড় মাড়াই ও বেইলছি পরিত্যক্ত জমি ও ভবনগুলোতে গরুর খামার করা হয়েছে। কিছু কিছু কোয়ার্টারে পেছনের অংশে অবৈধভাবে একাধিক নতুন অবৈধ স্থাপন নির্মাণ করা হচ্ছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলোনিতে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, রেলওয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ইউনিট নামে-বেনামে দখল করে ভাড়া দিচ্ছেন অন্যত্র। নিয়েছেন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও রান্নার কাজে নিয়মিত ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ বৈদ্যুতিক চুল্লি। ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি মাসে বেহাত হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা।
এদিকে রেলওয়ে এলাকায় কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ১০টি বাংলোর মধ্যে শুধু পিডব্লিউ, আইডব্লিউ কর্মকর্তা তাদের নির্দিষ্ট বরাদ্দকৃত বাংলোতে থাকছেন। বাকি আটটি বাংলোতে থাকছেন অন্যান্য কর্মচারী ও অস্থায়ী ভাড়াটিয়া। এদের মধ্যে স্টেশন মাস্টারের বাংলো ব্যবহার করছেন রেলওয়ের চালক। কিন্তু বর্তমানে স্টেশন মাস্টার থাকছেন নিজ বাড়িতে।
জংশন রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা (এসএসএই) কিশোর চন্দ্র দেব বর্মা বলেন, যেসব কোয়ার্টারগুলোতে তারা বসবাস করছেন ওইসব বাসাতে কোনো অবৈধ বিদুৎ সংযোগ নেই। সব মিটারের আওতায় রয়েছে। কিছু কিছু বাসাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বৈদ্যুতিক চুল্লি ব্যবহার করেছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করে দিয়েছি।
লাকসাম জংশন স্টেশনমাস্টার শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রত্যেকটি কলোনিতে কিছু বৈধ কোয়ার্টার থাকলেও জরাজীর্ণ রয়েছে অধিকাংশ। এ জন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কোয়ার্টারগুলোতে থাকতে চায় না। ওইসব কোয়ার্টার দখল-বেদখল হয়ে আছে কিনা আমি জানি না। আমি রেলস্টেশন প্লাটফরমের বিষয়ে কথাবার্তা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারব না।
লাকসাম রেলওয়ে আই ডব্লিউ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ বাসায় বহিরাগতদের থাকার কোনো সুযোগ নেই। কয়েক বছর পূর্বে অভিযান চালিয়ে বহিরাগতদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
share: