২৬ বছর পর দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 2 Sep 2022, 2:48:26 PM
কাউন্সিলরদের তালিকা প্রণয়ন ছাড়াই দীর্ঘ ২৬ বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে অবশেষে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে আজ শুক্রবার। বিকেল তিনটায় এবিএম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের কুমিল্লা (উঃ) জেলা সভাপতি ম. রুহুল আমিন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি।
বহুধা বিভক্ত আ’লীগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়াতে কাউন্সিলরদের মতামত বা ভোটাভোটি ছাড়াই সম্মেলনের কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটি। সম্মেলনের দিন কাউন্সিলরদের ভোটা ভোটির পর্ব না রেখে শুধুমাত্র বক্তৃতা পর্ব রাখায়, সম্মেলনকে ঘিরে নেই কোন উত্তাপ, আমেজ, প্রচার- প্রচারনা। সম্মেলনে কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটা ভোটি না থাকায় কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারেও কোন প্রার্থীরা যাচ্ছেন না। প্রার্থীরা দলের বিভক্ত নেতৃত্বদানকারী নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন। অপরদিকে একই কালারের ২টি পোষ্টারে একটির আমন্ত্রীত অতিথি অপর পোষ্টারের সাথে মিল নেই। তালিকায়ও রয়েছে সমন্বয়হীনতা।
গত ২জুন জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি কক্ষে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির এক সভায় কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ’লীগ’র সাংগঠনিক টিম-৬ এর আহবায়ক ও কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগ’র সভাপতি ম. রুহুল আমিন’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ও চট্রগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক) হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (এমপি)’র উপস্থিতিতে উক্ত সভায় কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সচিব এবিএম গোলাম মোস্তফাকে আহবায়ক ও দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিরি অন্যান্য সদস্যরা হলেন রাজি মোহাম্মদ ফখরুল (এমপি), বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মতিন মুন্সী, মোঃ শেখ আব্দুল আওয়াল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মতিন সরকার, মোঃ হুমায়ুন কবির, আবুল কালাম আজাদ, মোস্তফা কামাল চৌধুরী, সাজেদা আক্তার মায়া, একেএম শফিকুল আলম কামাল, নজরুল ইসলাম সরকার, এডঃ আয়েশা বেগম, মোঃ ইসমাঈল হোসেন, আব্দুল আলীম, বাবু কালিপদ মজুমদার, এটিএম মেহেদী হাসান, মোসলেহ উদ্দিন মাষ্টার, মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান ভুইয়া, মোঃ আনোয়ার হোসেন খোকন এবং এডঃ এনামুল হক মাসুম। উক্ত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে জেলা আওয়ামলীগের সাভাপতি ম. রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাষ্টার এবং সাবেক মন্ত্রী এএফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সীকে রাখা হয়।
পরবর্তিতে দেবীদ্বার উপজেলা ত্রীবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের পূর্ব ঘোষিত তারিখ ২ জুলাই পরিবর্তন করে ২১ জুলাই ঘোষণা করা হয়। কারন হিসেবে দেখানো হয়,- উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে সম্মেলন না হওয়া বাকী ৪টি ইউনিয়নের সম্মেলন উপজেলা সম্মেলনের পুর্বেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে ওই তারিখ পেছানো হয়। গত ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় এক জরুরী বৈঠকে এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের মধ্যে দেশব্যাপী আলোচিত মারামারি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্মেলনের তারিখ আরো এক দফা পিছিয়ে আগামী ২ সেপ্টেম্বর করা হয়। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে একাধিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও ৯ বার সম্মেলনের তারিখ পেছানো হল। গত ২১ জুলাই তারিখের সম্মেলন অনুষ্ঠানে দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এবিএম গোলাম মোস্তফা ষ্ট্যাডিয়ামে ১০ হাজার দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আয়োজনে ব্যয়বহুল মঞ্চ ও ষ্টিল ফ্রেমের পেন্ডেল নির্মাণ সম্পন্ন করা কালে ১৬জুলাই সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সংঘর্ষের কারনে সম্মেলন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় প্যান্ডেল গুটিয়ে নেয়া হয়। আগামী ২ সেপ্টেম্বর সম্মেলন সম্পন্ন করতে পাঁচ হাজার দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আয়োজনে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে ষ্টিলের ফ্রেমের প্যান্ডেলের স্থলে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায় ৭১ সদস্যের উপজেলা কমিটিতে শুধু মাত্র সভাপতি, সাধারন সম্পাদক পদে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। দির্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্বের জ্যাম পড়ে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদে যাদের নাম ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে তারা হলেন চট্টগ্রাম বিশ^ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা ও গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সফিউদ্দিন (সফিক) সরকার, দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টার, দেবীদ্বার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ আবুল কাশেম চেয়ারম্যান, উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও এসএ সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান একেএম সফিকুল আলম কামাল, দেবীদ্বার এসএ সরকারী কলেজ এর সাবেক ভিপি ও বর্তমান কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের উপদেষ্টা এটিএম মেহেদী হাসান বুলবুল, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় আহত দেবীদ্বার এসএ সরকারী কলেজের সাবেক এজিএস ও দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন খোকন। আওয়ামী লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলার ১০ নং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো. হুমায়ন কবির, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন মাষ্টার, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যক্ষ এম হুমায়ন মাহমুদের ছোট ভাই এজাজ মাহমুদ।
সাধারণ সম্পাদক পদে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য লুৎফর রহমান বাবুল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আবদুল জলিল চৌধুরী, কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল চৌধুরী, দেবীদ্বার পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও পৌর সহায়ক সদস্য (কমিশনার) মোঃ মুজিবুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা শেখ ফারুক আহমেদ, লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মাহববুর রহমান, হাজী মোসলেহ উদ্দিন মানিক ভূঁইয়া, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আবুল কাসেম ওমানী, জীবন চন্দ্র দাস, আব্দুল্লাহ আল নোমান (লিমন), আইয়ুব আলী মাষ্টারসহ প্রায় ২৪-২৫ জন।
দেশ স্বাধীনের পর ৫২ বছরে দু’টি নির্বাচিত কমিটি ছাড়া আ’লীগ খুড়িয়ে চললেও সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুখ দেখেননি। বিভিন্ন সময়ে দলীয় বৈঠকে সিলেকশনে সভাপতি, সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক নেতা-কর্মী। তবে এ সময়ে যারা আ’লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দলের ত্যাগী সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গ ছিলেন। ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকালে দেবীদ্বার আসনের সাবেক এমএলএ বৃহত্তর কুমিল্লা (কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাক্ষণবাড়িয়া) জেলা আ’লীগের সভাপতি ও শ্রমিক নেতা আব্দুল আজিজ খান দেবীদ্বারে এসে আলী আশরাফ ভূঁইয়াকে সভাপতি ও এডভোকেট জানে আলমকে সাধারন সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করে যান। তার পর ১৯৯১ সালে সম্মেলন মাধ্যমে অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদকে সভাপতি ও আব্দুল মতিন মূন্সীকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আলহাজ¦ জয়নুল আবেদীনকে সভাপতি ও একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সাধারন সম্পাদক করে গঠিত কমিটির পর আর কোন সম্মেলন বা কমিটি গঠন করা হয়নি।
share: