চান্দিনা পৌরসভার নির্ধারিত প্লান্টের পানি সরবরাহ বন্ধ
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 8 Aug 2022, 9:04:48 AM
কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার পানি পাম্প ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এলাকায় কয়েক দফায় ৯টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, তার চুরির ঘটনাসহ নানা কারণে পাঁচ মাস যাবৎ পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এসব ঘটনায় চান্দিনা থানায় ৪টি সাধারণ ডায়েরী করার পরও চোরচক্রকে আটক বা মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, চান্দিনা বাজারের বেশিরভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট, মিষ্টি দোকান, চা দোকান গুলো পৌরসভা সরবরাহকৃত পানির উপর নির্ভরশীল। প্রায় ছয় মাস যাবৎ চান্দিনা পৌর সদরে সুপেয় পানির অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে অন্তত ২শ গ্রাহক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে চান্দিনা পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর ২০০৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে চান্দিনা পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানির পাম্প স্থাপন করা হয়। এসময় পৌরবাসীদের সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চান্দিনা পৌরসভার পানি শাখায় ৫জন কর্মচারী নিয়োগ দেন। ওই সময় পৌরসভার ১, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে প্রায় ৯শ গ্রাহক তৈরি করে পানি সরবরাহ শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিম্নমানের পাম্প ও সরবরাহকৃত পাইপ ব্যবহারে শুরু থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত চান্দিনা পৌরসভার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি।
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ৯শ গ্রাহকের মধ্যে ৭শ গ্রাহকই বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। সর্ব শেষে ১৯২জন গ্রাহক নিয়ে চলছিল পৌরসভার পানি শাখা। প্রতি মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে পৌরসভার পানি শাখাটি।
অপরদিকে, পৌরসভার পানি শাখায় ২জন পাম্প চালক নিয়োগ থাকার পরও তারা কেউ পাল্ট এলাকায় না থাকায় ও পাম্প এলাকার ট্রান্সফরমারগুলোতে চুরি রোধে কোন ব্যবস্থা না থাকায় গত ৬ মাসের মধ্যে চান্দিনা পৌর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও পাম্পে কয়েকটি চুরির ঘটনায় ৯টি ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক তাঁর ও মিটার চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। এসব ঘটনায় ৪টি সাধারণ ডায়েরী করে পৌর কর্তৃপক্ষ।
চান্দিনা পৌরসভার পানি শাখার বিল ক্লার্ক রেজাউল করিম জানান, পৌরসভার ৩টি পাম্পের মধ্যে ২টি পাম্পই নষ্ট। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর গোবিন্দপুর পাম্পটি নষ্ট ও রারিরচর প্লান্টের পাম্পটি পুড়ে যায়। সাথে সাথেই ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে গোবিন্দপুর পাম্পটি চালু করা হয়। কিন্তু রারিরচর প্লান্টের পাম্পটির পানি ভাল না বিধায় তা চালু করা হয়নি।
তিনি আরও জানান, গত ৬ মাসে গোবিন্দপুর ও চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ সংলগ্ন পাম্পে ও রারিরচর প্লান্টে ধারাবাহিক চুরি হচ্ছে। চোরচক্র এ পর্যন্ত ৯টি ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক তাঁর ও মিটার চুরি করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় আমরা থানায় ৪টি সাধারণ ডায়েরী করি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন সুফল পাইনি।
অপরদিকে শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে বাগান বাড়ি মালিক সোসাইটির উদ্যোগে বাগান বাড়ি সড়কে স্থানীয় বিশুদ্ধ পানি সেবা বঞ্চিত গ্রাহকরা জড়ো হয়। এসময় চান্দিনা পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত বিশুদ্ধ পানি সরবারাহের দাবি জানান তারা। এসময় বক্তৃতা করেন- বাগানবাড়ি মালিক এক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. কবির মজুমদার, গ্রাহক মো. ইসমাইল হোসেন, মো. শাহ আলম, শহিদ উল্লাহ, মো. নূরে আলম, মো. মাসুদ আগার, মো. আবদুল কুদ্দুস, মো. সফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এব্যাপারে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন- ‘পৌরসভার পাম্প হাউজের মিটার ও ট্রান্সফর্মার একাধিকবার চুরি হয়েছে। এই কারণে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে মানুষ পানির সেবা বঞ্চিত হচ্ছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন- ‘আমরা কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা একটি হিসাব দিয়েছে। সোমবার (৮ আগস্ট) আমরা টাকা জমা দিব। আশা করি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যাবো। এই সপ্তাহের মধ্যে আমরা পানি সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করবো।’লাইনের ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এটি ইঞ্জিনিয়ার এর বিষয়। তিনি বলতে পারবেন।
এবিষয়ে পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আতাউল মাসুদ বলেন- ‘দুইটি পাম্প হাউসে একাধিকবার মিটার, ট্রান্সফর্মার ও মালামাল চুরি হয়েছে। আমরা পানি সরবরাহ কার্যক্রম চালু করতে কাজ করে যাচ্ছি। পাম্প হাউসগুলোতে নৈশ প্রহরী না থাকায় বারবার চুরি হচ্ছে।
চান্দিনা পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মো. শওকত হোসেন ভূইয়া জানান, চোর চক্র ট্রান্সফরমার, তার চুরি করে নিয়ে পৌরসভাকে বিপাকে ফেলছে। এসব ঘটনা আমরা থানায় জিডি করে এবং আমি মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করেও কোন প্রকার সুফল পাইনি। তবে শীঘ্রই আমরা পাম্পগুলো চালু করার ব্যবস্থা করবো।
এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, পানির প্লান্টে ২জন পাম্প চালক সার্বক্ষনিক থাকার বিধান থাকলেও তারা কেউ থাকে না। অপরদিকে, ট্রান্সফরমগুলোতে চুরি রোধক ব্যবস্থা না নেওয়ায় বারবার চুরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা বেলাশহর ও তীরচর থেকে দুইজন ট্রান্সফরমার চোরকে আটক আদালতে পাঠাই। পৌরসভার ওই চুরির ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
share: