বিলাসবহুল তিন স্টেশনে ট্রেন থামবে কবে?
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 12 Aug 2022, 5:24:21 AM
কুমিল্লার ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন। একেবারে ঝকঝকে-চকচকে। আকাশি রংয়ের দেওয়াল। এসএস পাইপের চমৎকার রেলিং। রয়েছে প্ল্যাটফর্ম জুড়ে যাত্রীদের বসার জন্য বেঞ্চ। এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রীজ। স্টেশনের যাতে গরু, ছাগল কিংবা বখাটেরা ঢুকতে না পারে সে জন্য রয়েছে লোহার শিকল দিয়ে টানা প্রাচীর। আর দুই প্ল্যাটফর্মের মাঝ দিয়ে চলে গেছে সমান্তরাল চারটি রেললাইন। কোথাও কোন দাগ নেই। নেই কোন জনমানব। দেখতে অনেকটা বিদেশের রেলওয়ে স্টেশনের মত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই স্টেশনে কোন ট্রেন থামে না। কোন যাত্রীও উঠানামা করে না।
শুধু ময়নামতি নয়। লালমাই এবং আলীশ্বর এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বিলাসবহুল রেলওয়ে স্টেশন। তবে এর কোনোটিতেই থামে না ট্রেন, হয় না যাত্রী কিংবা মালামাল ওঠা-নামা। প্রায় ১০ বছর যাবত এসব স্টেশন বন্ধ রয়েছে। কবে চালু হবে তাও বলতে পারছেন না কেউ। তাই প্রশ্ন উঠেছে, যদি যাত্রী উঠা-নামাই না হয়Ñ তবে কেনো নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এসব স্টেশন? এসব স্টেশন এখন রীতিমত বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিকেল হলেই দৃষ্টিনন্দন এসব স্টেশনে স্থানীয় লোকজনের সমাগম ঘটে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-লাকসাম সেকশনে মোট ১৩টি রেলওয়ে স্টেশন আধুনিকায়ন এবং ১৮৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে চারটি স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। রসুলপুর এবং রাজাপুরে দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। সবগুলোরই স্টেশনের নকশা ও আকৃতি একই ধরনের। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স অটোমোবাইল প্রোডাক্টস লিমিটেড এসব স্টেশনের নির্মাণ কাজ করছে। এর মধ্যে তিনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আছে আরো দু’টি।
ম্যাক্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্টেশনগুলো নতুন করে তৈরি করা হয়নি। পুরনো স্টেশনগুলোকে সংস্কার করে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি স্টেশনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। রেলকর্তৃপক্ষ এখনো এগুলো বুঝে নেয়নি। বাকিগুলোর কাজ চলছে।
এসব স্টেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন প্রকল্পের পরিচালক শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এডিবির অর্থায়নে আখাউড়া-লাকসাম সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ ও স্টেশন আধুনিকায়নের কাজ চলছে। আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মোট ১৮৪ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে ইতিমধ্যে ১০০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। চারটি স্টেশনের আধুনিকায়নের কাজও শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে।নতুন স্টেশনগুলো নির্মাণ হলেও কেন সেগুলোতে ট্রেন থামছে বা যাত্রী উঠানামা করছে না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রামের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, রেলওয়ের স্টেশন মাস্টারের সংখ্যা কম। এ কারণে আমাদের অনেক স্টেশন বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া দেখেন সব স্টেশনে তো সব ট্রেন থামে না। আন্তঃনগর ট্রেনও সব স্টেশনে থামে না। যেসব স্টেশন নির্মাণ হয়েছে সেগুলোর কোনো কোনটিতে লোকাল ট্রেন থামে এবং যাত্রী উঠানামা করে। পণ্যবাহী ট্রেন থামে এসব স্টেশনে।
share: