...
ব্রেকিং নিউজ
দ্বিতীয় মাদার টেরেসা, কারো কাছে তিনি সাক্ষাৎ দেবী ⁜ মায়ের ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসে সন্তানদের ক্যারিয়ার সুনিশ্চিত হয় -একান্ত সাক্ষাৎকারে সুনীতি রাণী বিশ্বাস ⁜ রাতের আধাঁরে বেকু মেশিন দিয়ে রাস্তা উপড়ে ফেলার অভিযোগ; ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্ধ ⁜ জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ⁜ ঢাকা ওয়াসার পুরস্কার জিতেছে ব্রাক ব্যাংক ⁜ কলেজ ক্যাম্পাসে বখাটের হাতে লাঞ্চিত ভিক্টোরিয়া কলেজ উপাধ্যক্ষ ⁜ মন্দার দিকে এগোচ্ছে রুশ অর্থনীতি ⁜ গুগুল এবং চ্যাটজিটিপি ⁜ ক্রেডিট সইস ব্যাংকটিকে কিনে নিল ইউবিএস ব্যাংক ⁜ রহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ ⁜

প্রেম_নারী_এবং_একজন_হুমায়ূন_আহমেদ

স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 28 Aug 2022, 5:00:37 PM

image06

মেহেরুন্নেছা

শৈশবে আমার দাদার কাছে এক সাধক পূর্বপুরুষের কাহিনী শুনেছিলাম। তিনি গহীন রাতে বাড়ির পাশের ঘনবনে কবরের ন্যায় গর্ত খুঁড়ে অবস্থান করতেন। সেখানে তিনি খোদাকে পাওয়ার আশায় ইবাদত করতেন। তাঁর সেই সাধনার পথ ছিল কঠিন থেকে কঠিনতর। ভাবতাম, একজন মানুষ কিসের টানে আরামের ঘুম, কোমল বিছানা ছেড়ে সেই অন্ধকারে ধ্যান করতে যেতেন। আজ বুঝি, সে হল খোদা প্রেম!শিল্পী, সাধক, লেখকদের সৃষ্টিশীলতার নিয়ামক হল প্রেম। স্বয়ং স্রষ্টা পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টির প্রতি অমোঘ প্রেম থেকে।

একজন সাহিত্যিকের যে অনিবার্য অভিযাত্রা তার চরাভূমির পরতে পরতেও থাকে প্রেম। তিনি অহর্নিশি ভালোবাসা কিংবা আবেগ-বেদনার অন্তর্দহনে দগ্ধ হতে থাকেন। তার নিরুদ্দিষ্ট জীবনের বাহন অবশ্যই প্রেম। সৃষ্টির রহস্য যেমন নিহিত থাকে প্রেমে; তেমনি লেখক প্রেমের গভীর নিগূঢ়তম পথে পদচিহ্ন রেখে রেখে সৃষ্টির খাতায় ক্রমাগত সোহাগ-চুম্বন এঁকে চলেন।লেখকের সে এক অন্যরকম জীবন। যেথায় অবিরাম বুদ্ধির সাথে চলে বোধের মনোলোভা আলপনা আঁকার খেলা। একজন আটপৌরে মানুষের অনুভূতিতে প্রেম কখনো গভীর উপলব্ধিতে ধরা দেয়না। লেখক সমাজের আর দশজনের মত কোনো অবস্থাতেই আটপৌরে মানসিকতার নন। তিনি গভীর দার্শনিকতায় ডুবে থাকেন। আধ্যাত্মিকতা তাকে জীবনভর তাড়িয়ে বেড়ায়। অতৃপ্তির মর্মবেদনারা চিরকাল লেখকের চিত্তগভীরে শ্রাবণ ঝরায়। তার ভালোবাসার গল্প শুরু হয় চরম শুদ্ধতা, চরম অমলিনতা, চরম পবিত্রতা দিয়ে।

এমন পরিশীলিত মনোভাব নিয়ে লেখক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে প্রণয়াবদ্ধ হন গুলতেকিনের সাথে। ষোড়শী রূপবতী গুলতেকিনের প্রেমে হুমায়ূন তখন পাগলপারা ছিলেন। হুমায়ূন যখন পিএইচডি নেবার জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্ছিলেন তখন গুলতেকিন গর্ভবতী। কিশোরী স্ত্রীর প্রেমে মগ্ন হয়ে তিনি বিমানের টিকেট ছিঁড়ে ফেলতে চাইলেন। কিন্তু বুদ্ধিমতী গুলতেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উঠতি লেখক স্বামীর পাগলামিকে আমলে নেননি। বরং যোগ্য জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বামীকে ভালোবেসে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের এই গভীর ভালোবাসা একসময় সময়ের কোপানলে পড়ে।

সৃষ্টিশীল হুমায়ূনের চারপাশে তখন প্রচুর জল। তারপরেও তিনি তৃষ্ণার্ত হলেন। তৃষ্ণা মেটাবার গুপ্ত সুড়ঙ্গে তিনি পা রাখলেন। জগতে সৃষ্টিশীলরা চিরকাল তার মনের গহীন খেলাঘরে কল্পনায় অথবা গোপনে খেলারাম; যেথায় জীবন ও মনন রক্ত মাতাল করা তাড়নায় আচ্ছন্ন। তারা কখনো কখনো আবেগের ঘোরে স্বাভাবিকতার খোলস ছেড়ে ভালোবাসার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মিলিত হওয়ার উদগ্রীব আহাজারিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন।

একদা লেখক হুমায়ূন যে গুলতেকিনের প্রতি আত্মসমর্পণ করেছিলেন সেখান থেকে তার খুবই সন্তর্পণে মোহমুক্তি ঘটতে লাগলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটলো। এরপর তিনি মেহের আফরোজ শাওনের সাথে দ্বিতীয়বার বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। হুমায়ূনের জীবনে পুনরায় গভীর প্রেম এলো এবং তিনি শুধুমাত্র ভালোবাসায় অন্ধ হয়েই শাওনের সাথে নিজেকে জড়ালেন। হুমায়ূনের জীবনে দুই নারী এলেন। রুচিশীল ও পরিমিতিবোধসম্পন্ন হুমায়ূন নিষিদ্ধ পথে পা বাড়াননি। ধর্ম ও সামাজিকতার মধ্যে থেকেই তিনি তার যাপিত জীবনের নকশা এঁকেছিলেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মারা গেলেন দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনের ভালোবাসার আবেশে থেকে। হুমায়ূনের মৃত্যুর পর শাওন এখনো বিয়ে করেননি। তবে হুমায়ূনের প্রথম ও সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবি আফতাব আহমেদকে বিয়ে করেন।

গুলতেকিন বহুকাল পরে প্রেমে বিপ্লবী হয়ে পুনরায় ভালোবাসার চাপড়ে আবদ্ধ হলেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় নতুন প্রেমে বু্ঁদ হলেন। সমাজের কটাক্ষকে উপেক্ষা করে নিজের মত জীবনকে সাজানোর জন্য স্যালুট গুলতেকিনকে। অনেকেই বলছেন, গুলতেকিন অনেক দেরীতে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। তার আরো আগেই বিয়ে করা উচিত ছিলো। আসলেই কি তাই? আমার অনুমান, বুদ্ধিমতি গুলতেকিন দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়লেন, ভালোবাসলেন এবং বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। হতে পারে ভালোবাসাহীন বিয়েতে তিনি নিজেকে জড়াতে চাননি বলেই এতোটা কালক্ষেপন।

লেখক হুমায়ূনের 'সম্রাট' হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে গুলতেকিনের অসামান্য ত্যাগ। অনেকেই গুলতেকিনের সাথে ডিভোর্স ও শাওনকে বিয়ে করার কারণে হুমায়ূনকে গড়পড়তা, সাধারণ, দায়িত্বজ্ঞানহীন পুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আমি বলবো, হুমায়ূন ও তার নারীদের জীবন তথাকথিত নারীবাদী ও পুরুষতান্ত্রিকতার দৃষ্টিতে দেখা মানে হল এই তিন মানব-মানবীর জীবনের প্রকৃত সত্যকে দূরে রাখা। আসলে তারা তিনজনই ভালোবাসার গ্যাড়াকলে ও যাঁতাকলে পড়েছিলেন।

আমরা জানি, কারো কারো জীবনের নিরেট সত্য হল, ভালোবাসার এইক্ষণে যতই প্রেমঘন অনুভব-কুহক-ফোঁপানি থাকুক না কেনো, সময়ের ঘেরে অবশেষে একদিন সে ভালোবাসা হাহাকারের শূণ্যবৃক্ষে পর্যবসিত হয় এবং তারপরেই মানব মন আবারো নতুনভাবে ছুটতে চায়। আবারো ভালোবাসার মোহতানে, সুরে, রঙে, আবেশে জীবনকে ভরে তুলতে চায়। মানবের এহেন ভালোবাসায় নিমজ্জন প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অথবা সহজাত ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার নোনা অভিলাষ থেকে হতে পারে। ঠিক একারণেই হুমায়ূন গুলতেকিনকে ছেড়ে শাওনের ভালোবাসার আঁচলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

অসম্ভব জনপ্রিয় একজন লেখক এই হুমায়ূন আহমেদ। জীবিত হুমায়ূনের চেয়ে মৃত হুমায়ূন যেন অনেক বেশি শক্তিশালী। হুমায়ূনের পরিবারের সদস্যরা যারযার যোগ্যতায় যতই বলীয়ান হোননা কেনো তাদের জীবনের চক্রবাক এখনো ঘুরপাক খায় হুমায়ূনকে ঘিরেই। এদেশে কতজন ডিভোর্সের পরে দ্বিতীয়বার বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাদের খোঁজ কেউ রাখেনা। অথচ একজন গুলতেকিন দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে সেটা নিয়ে তোলপাড় হয় কেবল হুমায়ূনের সাবেক স্ত্রী বলেই। আর কবি ও অতিরিক্ত সচিব আফতাব আহমেদ-এর কাছে মিডিয়ার লোকজন দৌড়ে যায় সেও কেবল গুলতেকিনকে বিয়ে করার কারণেই।

এখনো হুমায়ূন এদেশের অসংখ্য মানুষকে তার লেখনীতে সম্মোহন করে রেখেছেন। হুমায়ূনপ্রেমীরা হলুদ পাঞ্জাবী পরে 'হিমু' সাজে কিংবা নীল শাড়ি পরে 'রূপা' বনে যায়। 'মিসির আলী' এবং 'বাকের ভাই' চরিত্র এদেশের মানুষের হৃদয়ে আজো অম্লাণ।

আজ মনে পড়ছে প্রায় কয়েকমাস আগে হুমায়ূন আহমেদ-এর পিরুজালি গ্রামের নুহাস পল্লীতে দুঃখের প্রসাদরূপ ভ্রমনের স্মৃতি। পিরুজালি গ্রামে সেদিন সন্ধ্যা নেমেছিল। ধরার বুকে তখন তিমির ফেলেছে তার ছায়া। কর্মবহুল জীবনের খানিক যবনিকা টেনে গিয়েছিলাম কিংবদন্তী লেখক হুমায়ূন আহমেদ-এর বাগানবাড়ি নুহাসপল্লীতে।

একদিন এখানকার প্রকৃতি জননন্দিত নায়কের প্রাণবন্ত বিচরণে ধন্য হয়ে যেত। অথচ আজ সেখানে সন্ধ্যা বড় ম্লাণ, বড় রহস্যময়। একদিন যে গাছের ছায়াগুলো লম্বা হাত বাড়িয়ে দিতো নুহাসপল্লীর সবুজ কার্পেটের ন্যায় মাঠে। এখন তার চারপাশে কেবল বিষাদের নিনাদ।

নুহাসপল্লীতেই লিচুবাগানের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হুমায়ূন আহমেদ। জীবিত হুমায়ূনের কলহাস্যের স্বাক্ষর বৃষ্টিবিলাসসহ সবকিছুই যেন সেদিন আমার সাথে কান্নায় যোগ দিয়েছিলো। প্রিয় লেখকের জন্য চোখের জল! সত্যিই আমি কাঁদছিলাম। আমার আবেগের বাঁধ উৎসারিত তখন। মনে মনে বলছিলাম, হে লেখক, আমার যে আপনাকে দেয়ার মত কিছুই নেই। আমার আছে কেবল ভালোবাসার জল। সে ভালোবাসার জলে আপনাকে সিক্ত করে দিয়ে গেলাম। ভালো থাকুন আপনি পরপারে।


share:
Today
প্রিন্ট নিউজ
...
বিজ্ঞাপন
সময়
সর্বশেষ
➤ দ্বিতীয় মাদার টেরেসা, কারো কাছে তিনি সাক্ষাৎ দেবী
➤ মায়ের ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসে সন্তানদের ক্যারিয়ার সুনিশ্চিত হয় -একান্ত সাক্ষাৎকারে সুনীতি রাণী বিশ্বাস
➤ রাতের আধাঁরে বেকু মেশিন দিয়ে রাস্তা উপড়ে ফেলার অভিযোগ; ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্ধ
➤ জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি
➤ ঢাকা ওয়াসার পুরস্কার জিতেছে ব্রাক ব্যাংক
➤ কলেজ ক্যাম্পাসে বখাটের হাতে লাঞ্চিত ভিক্টোরিয়া কলেজ উপাধ্যক্ষ
➤ মন্দার দিকে এগোচ্ছে রুশ অর্থনীতি
➤ গুগুল এবং চ্যাটজিটিপি
➤ ক্রেডিট সইস ব্যাংকটিকে কিনে নিল ইউবিএস ব্যাংক
➤ রহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ
➤ ১৯৭১ সালের গনহত্যা আনতে হবে জবাবাদিহিতার আওতায় - প্যাট্রিক
➤ কক্সবাজারে নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর
➤ রমজানে বাজারেরঅভিযান চালাবে বিএসটিআই
➤ বরুড়ায় ড.সুনীথানন্দ মেমোরিয়াল সোসাইিটর উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা,স্মৃতিবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান
➤ নাশকতা বিএনপি ঘটিয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে - ওবায়দুল কাদের
➤ সংক্ষিপ্ত কবিতা
➤ ইবি সাদ্দাম হলে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
➤ মোংলা বন্দরে ড্রেজারথেকে সিটকে পড়ে কর্মী নিহত
➤ বৃষ্টি যখন আইরিশদের আশীর্বাদ
➤ বর্তমান সরকার ও এই নির্বাচন কমিশনের অধিনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি
➤ নয় দিনেও বিচার পায়নি কুবি শিক্ষার্থীরা, প্রতিবাদ গানে গানে
➤ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক দেউলিয়া
➤ ক্রিকেট দল ইংল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করল ব্রিটিশ গণ মাধ্যম
➤ কুবিতে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা ও হেপাটাইটিস বি বিষয়ে সচেতনা
➤ দেবিদ্বারে ডায়াবেটিস মেলায় ফ্রি স্বাস্থ্য সেবা
© All rights reserved © 2022 swadeshjournal.news
Design & Developed by : alauddinsir