নারীর_চোখে_নারী
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 18 Jun 2022, 6:57:29 PM

মেহেরুন্নেছা
জীবনের বহমানতায় একজন রূপবতীর জীবনালেখ্য সর্বদাই জটিল। সমাজ তার মানসিক অবয়বকে জীবনের পরতে পরতে বিপন্ন করে তুলে। বর্তমান বিশ্বে মানুষের নিরাপত্তা হুমকীর সম্মুখীন হলেও একজন রূপবতীর নিরাপত্তা আরো বেশি হুমকির সম্মুখীন।
বালিকা....! সে যদি হয় দেখতে সুন্দর! তো বাল্য থেকেই শুরু হবে নীরব ভোগান্তি। দেহের স্পর্শকাতর জায়গায় বলিষ্ঠ হাতের কদর্য স্পর্শ বালিকাদের কোনো না কোনো সময় পেতে হয়। এই গোপন-নোংরা স্পর্শ বালিকার মানসিক গড়নকে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা দেয়। তার কোমল মনে ভীতির সঞ্চার করে। এই ঘটনা যে কোনো বয়সের, যে কোনো শ্রেণীপেশার বিকৃত পুরুষ দ্বারা ঘটতে পারে। এই পুরুষগুলো বালিকার চারপাশেই সাধারণের মাঝে বিচরণ করে। সুযোগ পেলেই তারা বালিকার উপর বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায়।
কিশোরি ! সে যদি হয় দেখতে সুন্দর তো আর যায় কোথায়! এই কিশোরিকে ইভ-টিজিং থেকে রক্ষা করার জন্য বাবা-মাসহ পুরো পরিবারকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। তারপরেও যদি শেষ রক্ষা হয়। কি ধনী, কি গরীব সকল কিশোরি কোনো না কোনো সময় পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, আত্মীয়-স্বজন, রাস্তাঘাট, কর্মস্থল সর্বত্র যৌন হেনস্থার শিকার হয়।
বালিকা, কিশোরি, তরুণী, মহিলা--- এরা সবাই জীবনের চক্রবাকে কখনো কন্যা, কখনো জায়া, কখনো জননী এবং প্রত্যেকেই কিন্তু নারী! এই নারীদের পোহাতে হয় অস্থির টানাপোড়েন আর বৈষম্যের হল্লা। আজও এদেশের বেশির ভাগ পরিবারে বাবা-ভাই নামক পুরুষরা তাদের কন্যা কিংবা বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য পাঁয়তারা করতে থাকে। এটাতে শামিল হয় আরো কিছু কপট নারী যারা পুরুষতান্ত্রিকতার কবলে পড়ে সমগোত্রীয় নারীর প্রতি সহিংস হয়ে ওঠে। তাই অনেক মাকে দেখা যায় মেয়েকে সম্পত্তির ভাগ না দেওয়ার জন্য ছেলে সন্তান ও স্বামীর অন্যায়ের দোসর বনে যায়।
শতশত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে একজন নারী যখন কর্মজীবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন তার জীবনে শুরু হয় নানারকম বিশৃঙ্খলা। চাকুরি তখন আশীর্বাদ না অভিশাপ--- এটাই বিরাট প্রশ্ন আকারে পীড়া দিতে থাকে। অবশেষে নারীর চাকুরি নারীর জীবনে স্বস্তি আনার পরিবর্তে আগাছাসম একরাশ জঞ্জাল নিয়ে আসে। চাকুরি হয়ে দাঁড়ায় নারীর কাল। পরিবারকে আর্থিক সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সমর্থনের কিঞ্চিত ব্যত্যয় ঘটলেই শুরু হয় কর্মজীবী নারীকে হেনস্থা ও দোষারোপের বন্যা।
একজন কর্মজীবী নারীর সুখ-দুঃখ বলতে কিছু নেই। কর্মস্থল-পরিবার সর্বত্রই সে সমানতালে শ্রম দিবে। যেন তার কর্মক্লান্ত দেহখানি একখানা যান্ত্রিক ঘড়ি; যে ঘড়ি অবিরাম যাপিত জীবনকে টেনে-হেঁচড়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। থামার কোনো সুযোগ নেই। অথচ বাস্তবতা হলো নারীর দেহ কোনো অবস্থাতেই যান্ত্রিক ঘড়ি নয়। এটি জৈবিক ঘড়ি। হেথায় ক্লান্তি আছে, চঞ্চলতা আছে, অস্থিরতা আছে, রোগ আছে, ব্যাধি আছে, রাগ আছে, ক্ষোভ আছে, উত্তেজনা আছে, আবেগ আছে, প্রেম আছে, ভালোলাগা আছে, ভালোবাসা আছে। কিন্তু মুক্তবাজার বিশ্বে নারীর হতে হবে ক্লীবলিঙ্গের ন্যায়। প্রেম-ভালোবাসা-আবেগ-উত্তেজনার পথ তার জন্য নয়। সে শুধু রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও কর্মস্থলে বিনাবাক্য ব্যয়ে শ্রম দিয়ে যাবে। এটাই হলো কর্মজীবী নারীর অনিবার্য পরিণতি।
হায় নারী...! বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি! মহাকাল তোমাকে সৌন্দর্যের বাঁধনে বেঁধেছে বটে কিন্তু দুর্ভাগ্যকেও তোমার পথের সাথী করে দিয়েছে চিরদিনের জন্য।
সহযোগী অধ্যাপক
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে
share:
