ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 13 Jul 2022, 4:05:07 PM

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একাধারে আইনজীবী, সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও একজন ভাষা সৈনিক। তিনি ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর (১২৯৩ বঙ্গাব্দের ১৬ কার্তিক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উত্তরে রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন মুনসেফ কোর্টের সেরেস্তাদার। তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯০৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ থেকে বিএল পরীক্ষায় পাস করেন।
চাকরিজীবন শুরুতে তিনি প্রায় বছরখানেক কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯০৭ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) হিতসাধনী সভার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯১৫ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে বড় ভূমিকা পালন করে পরিচিতি লাভ করেন এবং ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরার জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন।
চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৩৭ সালে। ১৯৪২ সালে যোগ দেন ভারত ছাড় আন্দোলনে। ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগও করেছিলেন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস দলের পক্ষে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের পর একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে অধিবেশনের সব কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু লিয়াকত আলী খান এই দাবি নাকচ করে দেন।
১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাঁকে গৃহবন্দি করা হয় এবং তখন থেকে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণে বিরত থাকেন। এতদসত্ত্বেও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি নেতাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে ছোট ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে গ্রেপ্তারের পর ময়নামতী সেনানিবাসে নিয়ে হত্যা করা হয়।
share:
