চৌদ্দগ্রামের যুবলীগ নেতা শাহজালালের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলা
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 30 Jul 2022, 10:07:26 AM
শাহজালাল চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সেই মোস্তফা মনিরুজ্জামান জুয়েলের হামলার শিকার যুবলীগ নেতা শাহজালাল মজুমদারের বিরুদ্ধে এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। শাহজালাল চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও অস্ত্রধারী জুয়েলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিষোদ্গার’ করার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে- এমন দাবি করেছেন মামলার বাদী।
গত ১৪ জুলাই ওই ইউনিয়নের নালঘর বাজারের হামলায় শাহজালাল মজুমদার ও তার গাড়িচালক আমজাদ হোসেন আহত হন। এসময় শাহজালাল মজুমদারের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর থেকেই শাহজালালের দাবি, মনিরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। এ ঘটনায় এরইমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্ত জুয়েল পূর্বের তিনটি মামলায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন। ওইদিন হামলার ঘটনার পর জুয়েলের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এমন ঘটনার মধ্যেই যুবলীগ নেতা শাহজালালকে প্রধান আসামি করে তার আরও চারজন কর্মীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন মোহাম্মদ রাসেল নামের এক ব্যক্তি। রাসেল উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের কোমার ডোগা গ্রামের প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। গত ২১ জুলাই চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে এই মামলা দায়ের করেন তিনি। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার মামলার একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এতে দেখা যায়, মামলার এজাহারে রাসেল নিজেকে সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও আওয়ামী লীগকর্মী বলে দাবি করেছেন। মুজিবুল হক কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে মামলাটির বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই, কুমিল্লার পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, আমরা মামলার বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো মামলার নথি আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। আদালত আদেশ দেওয়ার পর নথি এসে পৌঁছাতে কয়েকদিন সময় লাগে।
শুক্রবার বিকেলে মামলার বাদী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমি চিওড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। সেই শিশুকাল থেকে মুজিবুল হক এমপির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি, এরপর যুবলীগ করেছি। তিনি আমার নেতা। আর জুয়েল আমার বন্ধু। শাহজালাল মজুমদার ও মামলায় অপর অভিযুক্তরা ফেসবুকে আমার নেতা মুজিবুল হক ও আমার বন্ধু জুয়েলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া মিথ্যাচার করেছেন। শাহজালাল বলেছেন, তার ওপর নাকি হামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের এমপি সাহেব, যা পুরোপুরি কাল্পনিক গল্প। এসব ঘটনায় চৌদ্দগ্রামের মানুষের মনে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা করেছি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ নিয়েছেন।
রাসেল আরও বলেন, শাহজালালদের বিরুদ্ধে মামলা আরও হবে। তাদের প্রতিটি মিথ্যাচারের ভিডিও আমাদের কাছে আছে। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা শাহজালাল মজুমদার বলেন, হামলার ঘটনার পর আমি গণমাধ্যমে বলেছি, মুজিবুল হক এমপির নির্দেশে আমার ওপর হামলার ঘটনা হয়েছে। তিনি আমার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস লাগিয়ে না দিলে এমন ঘটনা করার সাহস কারো নেই। জুয়েল যুবদল থেকে আসা একজন সন্ত্রাসী ও ক্যাডার। এসব কথা বলাই এখন আমার অপরাধ। আর যিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনিও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি এমপি সাহেবকে খুশি করতে আমার বিরুদ্ধে মনগড়া মামলা করেছেন। এসব বিষয় এখন দেশের মানুষ জানে। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই সাজানো মামলার প্রত্যাহার চাই।
এর আগে গত বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে শাহজালাল মজুমদার দাবি করেছেন, অস্ত্র হাতে ভাইরাল হামলাকারী মনিরুজ্জামান জুয়েল গ্রেপ্তার হলেও স্বস্তিতে নেই তিনি। কারণ এমপি মুজিবুল হকের নির্দেশে তার অনুসারীরা ইউপি কার্যালয় পাঁচ মাস ধরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে তার। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচার প্রার্থনা করেন।
শাহজালাল মজুমদারের ভাষ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে এমপি তাকে ফোন করে বলেন, তার ভাতিজার পরিবারের পছন্দের মেম্বারপ্রার্থী মনির হোসেনকে নির্বাচিত করতে সহায়তা করার জন্য। কিন্তু নির্বাচনে মনির পরাজিত হয়। এর দায় তার ওপর চাপিয়ে তাকে নানাভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে। তিনি ইউপি কার্যালয়ে যেতে পারছেন না। এমনকি তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ওই ইউনিয়নের মানুষ তাদের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে গত বুধবার সংসদ সদস্য মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, শাহজালাল আমার কর্মী। আমি কেন তার সঙ্গে এ ধরনের কাজ করবো! আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে একটি মহল চক্রান্ত করছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে শাহজালাল এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া জুয়েল শ্রীপুর ইউনিয়নের নালঘর গ্রামে প্রয়াত আলী আকবর মজুমদারের ছেলে। তিনি সবসময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়াতেন। এজন্য এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলেই জুয়েলের ভয়ে তটস্থ থাকতেন। এলাকার অনেকে তাকে ‘বন্দুক জুয়েল’ নামেও ডাকেন বলে জানা গেছে। জুয়েলের হাতে থাকা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রটির লাইসেন্স থাকায় তিনি কাউকেই পাত্তা দিতেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। জুয়েল এলাকায় নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তবে শাহজালাল মজুমদারের দাবি, জুয়েল একজন ‘ক্যাডার’। যুবলীগে তার প্রাথমিক সদস্যপদও নেই।
share: