বিজয়ের পরিপূর্ণ সুফল আর কত দেরি!
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 12 Jul 2022, 5:24:23 PM

নুসরাত রশিদ
ডিসেম্বর মাস মানেই অহংকার ও গৌরবের মাস। বাঙালির জাতীয়তাবাদের উন্মেষের সুদীর্ঘ ইতিহাসে অবিস্মরণীয় মাস এই ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও ত্রিশ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয়। এই বিজয় আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রে মাথা উঁচু করে, সমস্ত অধিকার পরিপূর্ণ করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার মূল নিয়ামক। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের এই বাংলাদেশের আছে নানা অর্জন, রয়েছে নানা চ্যালেন্জ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিজয়ের ৪৯ বছর পরও আমরা পরিপূর্ণ সুফল পাচ্ছি না। ১৯৭১ সালের অর্জিত এ বিজয় আমাদের শুধু একখন্ড স্বাধীন রাষ্ট্রই দেয় নি, দিয়েছিল আমাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে বেঁচে থাকা ও বাক স্বাধীনতার অধিকার। এ বিজয়ের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন ও আগ্রাসন বিহীন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা। যেখানে থাকবে না কোনো রেষারেষি, ক্ষমতার অপব্যবহার। থাকবে সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্হা এবং নিজেদেরকে রাষ্ট্রের বুকে স্বাধীনভাবে ফুটিয়ে তোলার অধিকার। বঙ্গবন্ধুর দেখানো সেই বিশাল স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে মানুষ আজ উন্নতির পতাকাকে আরো সুদৃঢ় করে অনেকদূর এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন বুনন করছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, রাহাজানি সহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দেখা আজও জনগণ পায়নি, পায়নি তারা বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ। কাঙ্ক্ষিত সেই বিজয়ের লক্ষ্যগুলো যেন আজও আমাদের অনেক ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়ে গেছে। আজ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নেই কোনো সুষ্ঠু বিচারব্যবস্হা, চারিদিকে বিভিন্ন খাতগুলোতে রয়েছে ঘুষ ও দুর্নীতির ভয়াল থাবা। এসব অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনাগুলোর কারণে দেশ আজ ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত ও জর্জরিত। মাদকের ছড়াছড়িতে আজ ব্যাপকভাবে নেশায় বুঁদ হচ্ছে আমাদের যুবসমাজ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ও অর্জিত বিজয়ের মূলপ্রেরণা ছিল সাম্য, সম্প্রীতি, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বিজয়ের সুদীর্ঘ ৪৯ বছরেও আমরা সেই প্রেরণাগুলোর পরিপূর্ণ দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারি নি। এই সুদীর্ঘ ৪৯ বছর কিন্তু একটা দেশ ও তার জাতির জন্য মোটেও কম সময় নয়। এই ৪৯ বছরে যদি দেশ সঠিকপথে পরিচালিত হতো, দেশের জনগণরা সঠিক, সুষ্ঠু ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে যেতো তাহলে আজ আমরা বিজয়ের সেই পরিপূর্ণ স্বাদ ও মহাতৃপ্তি লাভ করতে পারতাম। দেশের খুঁটি আজও এমন নড়বড়ে থাকতো না। এদিকে স্বাধীনতার পর দেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করে যারা অপমান করেছিল, সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এবং স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে গেলো আরেক ধাপ। জাতির প্রত্যাশার সঙ্গে সব ক্ষেত্রে প্রাপ্তির পরিপূর্ণতা না পেলেও অর্জন, উৎপাদন আর সক্ষমতায় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৫৭তম দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে সোয়া ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। ঢাকার পথে মেট্রোরেলের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। যোগাযোগ আর প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে চার লেনের বেশ কয়েকটি মহাসড়ক আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের। সবমিলে নানা চড়াই-উতরাই আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য বাংলাদেশ। চারিদিকে আজও ক্ষমতার অপব্যবহার, রেষারেষি। বিজয়ের অর্ধশত বছরে এসেও দেশ আজ সাক্ষী হচ্ছে হত্যা, খুন ও ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার। তাই আজ দেশের এই পরিস্থিতিতে দেশের তরুণ সমাজকে আরো সোচ্চার করে গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিত দেশকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়া, দেশের সবধরনের অসামঞ্জস্যতাগুলোকে কঠোর হস্তে দমন করে সুষ্ঠু উপায়ে দেশকে গড়ে তোলা। তবেই আমাদের অর্জিত বিজয় তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে সফল হবে, আর আমরাও বিজয়ের পরিপূর্ণ সুফল লাভ করতে পারবো।
share:
