...
ব্রেকিং নিউজ
বৃষ্টির আভাস থাকলেও গরমে বাড়তে পারে অস্বস্তি ⁜ বিকেলে সংসদে উঠছে সাইবার নিরাপত্তা বিল ⁜ ব্যবসায়ীর পৌনে ২ কোটি টাকা ছিনিয়ে নিলো প্রজন্মলীগ নেতা ⁜ চিকিৎসা শেষে আজ দেশে ফিরছেন ড. মোশাররফ ⁜ নিখোঁজের দুইদিন পর সেপটিক ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ ⁜ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্বিতীয় দিনে প্রায় ২২ লাখ টাকার টোল আদায় ⁜ কুমিল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট থেকে স্ত্রী-মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে গৃহকর্তার মৃত্যু ⁜ এশিয়া কাপে ফিরছেন লিটন, যোগ দিবেন আজ রাতেই ⁜ নিজের সন্তানকে শতক উৎসর্গ শান্তর ⁜ বাংলাদেশ-আফগান ম্যাচের খবর জানতে চাইলেন ফুটবল কোচ ⁜

টুকরো স্মৃতি--১

স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 28 Aug 2022, 4:48:52 PM

image06

প্রফেসর ডক্টর এ কে এম আছাদুজ্জামান।

হুমায়ূন আহমেদ সাহেব ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে এসেছেন এক্সটার্নেল হিসেবে পিরোজপুর সরকারি কলেজে বি,এসসি ক্লাসের রসায়নের ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে। সময়টা সম্ভবত ১৯৮৩ সাল। সপরিবারে এসেছেন। কলেজের একটু পেছনে উত্তর দিকে তাঁর ভগ্নপতির বাসায় ওঠেছেন। তাঁর বোন সুফিয়া খাতুন পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের বাংলার প্রভাষক এবং আমার পূর্ব পরিচিত। তাঁর স্বামী অ্যাডভোকেট আলী হায়দার সাহেব একজন রাজনীতিবিদ।

হুমায়ূন আহমদের বাবা ১৯৭১সালে পিরোজপুরে SDPO ( সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন।

পিরোজপুর সরকারি কলেজে রসায়ন বিভাগে শিক্ষকের ৪টি পোস্ট থাকলেও বিভাগে আমি একাই ছিলাম, বাকি তিনটি পোস্ট খালি ছিলো। পরীক্ষার্থীরা এক্সটার্নেল হুমায়ূন আহমদের নাম শুনে কিছুটা আতঙ্ক বোধ করছিলো আবার তাদের মাঝে কিছুটা কৌতুহলও ছিলো। । আমি ইন্টার্নেল হিসেবে ছেলেমেয়েদেরকে সাহস যুগিয়ে কিছুটা আশ্বস্ত করলাম।

পরীক্ষা শুরু হলো। প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা করে ৪দিন পরীক্ষা চলবে। হুমায়ূন সাহেব প্রথম দিন ল্যাবে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষার্থীদের সাথে হাসিখুশিভাবে কথাবার্তা বললেন, পরীক্ষার্থীদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে মনোযোগ সহকারে কাজ চালিয়ে যেতে বললেন এবং বিভাগীয় চ্যাম্বারে এসে নাস্তা খেলেন, আমার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় আলোচনা করলেন, ৫৫৫ সিগারেট ফোঁকলেন। উনি সিগারেট খায় দেখে আমি বিভাগীয় ল্যাব এটেনডেন্টকে দিয়ে এক প্যাকেট ৫৫৫ সিগারেট এনে অফার করলাম।

আমাদের প্রচলিত নিয়ম হলো দূর থেকে কোনো এক্সটার্নেল পরীক্ষা নিতে আসলে তার থাকা, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা, ও তার অন্যান্য আনুসঙ্গিক টুকটাক প্রয়োজনে যে খরচ হয় তা বিভাগের পরীক্ষা ফান্ড থেকে মেটানো। হুমায়ূন সাহেব যেহেতু তাঁর ভগ্নিপতির বাসায় ওঠেছেন কাজেই তাঁর থাকা খাওয়া নিয়ে বিভাগের তেমন কোনো সমস্যা নেই, খরচও তেমন একটা নেই। । পরীক্ষা যতোক্ষণ চলবে ততোক্ষণ তিনি বিভাগে থাকবেন, ততোক্ষণ তাঁর নাস্তা, পান সিগারেটের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি বিভাগ থেকে করা হবে।

হুমায়ূন সাহেব বললেন এখন তো আমাদের তেমন কোনো কাজ নেই, পরীক্ষার্থীরা তো কাজ করছে, বিকেলে এদের কাজগুলো দেখবো, ৭ ঘণ্টা তো দীর্ঘ সময়, ভাবছি কীভাবে সময়টা কাটানো যায়, একটা কাজ করেন , আমি তো দাবা খেলতে পারি আপনি যদি দাবা খেলতে জানেন তাহলে একটা দাবা বোর্ড নিয়ে আসেন, সময়টা কাটানো যাবে। আমি কলেজের নাইট ক্লাব থেকে দাবার গুটিসহ একটা বোর্ড আনালাম। আমাদের কলেজে রাত্রে শিক্ষকদের বিনোদনের জন্য একটি ক্লাব আছে যেখানে রাত্রে আগ্রহী শিক্ষকগণ খেলাধূলা ও নাস্তাপানি করতে পারে। আমিও রাতে কলেজে গিয়ে খেলাধূলা করি, বাংলার সহযোগী অধ্যাপক প্রফুল্ল কুমার ভাবুক স্যারের কাছে হারমোনিয়াম নিয়ে স্বরলিপির বই দেখে রবীন্দ্র সংগীত শিখি। আমার দুটি প্রিয় গান ছিলো, " এই করেছো ভালো নিঠুর হে, নিঠুর হে, এই করেছো ভালো্, অমনি করে হৃদয়ে মোর তীব্র দহন জ্বালো, নিঠুর হে, নিঠুর হে, এই করেছো ভালো " আর একটি হলো, " মনে রবে কিনা রবে আমারে, সে আমার মনে নাই, মনে নাই, মনে রবে কিনা রবে আমারে "। খেলাধূলার মাঝে সবাই মিলে পাউরুটি, ডিমের অমলেট ও চা খেতাম। দাবা খেলায় আমি বেশ পারদর্শীই ছিলাম বলা চলে।। দাবার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমার অনেক ক্র্যাস্ট ও ট্রপিও আছে।

হুমায়ূন সাহেবের সাথে আমার দাবা খেলা শুরু হলো। প্রথম গেইমটা জিতলাম। উনি বললেন আপনি তো ভালো খেলেন, আরেকটা খেলি। পরেরটাও জিতলাম। খেলার মধ্যেই চা নাস্তা এবং সিগারেট খেলেন। দেখলাম যে উনি কিছুক্ষণ পরপরই সিগারেট ধরাচ্ছেন। বেশ কয়েকটা গেইম খেললাম এবং সব কয়টাতে আমিই জিতলাম। উনি যে খারাপ খেলে তা কিন্তু নয়, ওনার অনেক বুদ্ধিদীপ্ত চাল লক্ষ্য করেছি। । ইতোমধ্যে অনেক সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু খেলা তিনি চালিয়েই যাচ্ছেন। লক্ষ্য করলাম যে, সিগারেটের প্যাকেট প্রায় খালি হয়ে আসছে। দাবার নেশা বড়ো নেশা। যারা খেলে কেবল তারাই বুঝে, আর হারলে তো কথাই নেই, সহজে খেলা ছেড়ে কেউ ওঠতেই চায় না। হুমায়ূন সাহেবেও খেলা চালিয়েই যাচ্ছেন। আমার তখন পূর্বের দুটো ঘটনা হঠাৎ মনে পড়ে গেলো।

এক বার এই পিরোজপুর সরকারি কলেজেরই পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের আমার সিনয়র সহকর্মী হারুনুর রশীদ হাওলাদার সাহেবের বাসায় সন্ধ্যার পর একটা কাজে গিয়েছিলাম। চা নাস্তা খাওয়ার পর উনি বললেন চলুন দাবা খেলি। খেলতে বসলাম দু'জনে। একটার পর একটা খেলছি আর উনি হেরেই যাচ্ছেন। খেলা শেষ হলেই বলে আরেকটা খেলি। সিনিয়র মানুষ কিছু বলতেও পারছিলাম না। এদিকে রাত ক্রমশ বেড়েই চলেছে আর উনিও হেরেই চলছেন। বুঝতে পারছিলাম অন্তত একটা গেইম উনি না জেতা পর্যন্ত আমাকে ছাড়বেন না। ইতোমধ্যে রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেছে। এবার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই গেইমটা ভুল চাল দিয়ে ইচ্ছে করেই হারবো, নতুবা উনি না জিতলে খেলা বন্ধও করবেন না আর আমিও বাসায় যেতে পারবো না। অবশেষে ইচ্ছাকৃতভাবে যখন হারলাম, উনি বললেন অনেক রাত হয়ে গেছে, এবার ওঠা যাক। ততোক্ষণে রাত একটা বেজে গেছে। আমি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। এতো রাত্রে রিক্সা না পেয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় আসলাম।

আর একটি ঘটনা হয়তো অনেকেরই জানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষক পরিসংখ্যানবিদ ও সাহিত্যিক এবং উপমহাদেশের খ্যাতনামা দাবাড়ু কাজী মোতাহার হোসেন ( যিনি ১৯২৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানের একক দাবা চ্যাম্পিয়ন ছিলেন ) একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে বাসায় লাঞ্চের দাওয়াত দিয়ে সকালে কাউকে কিছু না বলে ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে গেলেন। মেহমান দুপুরে বাসায় খাবে সে কথা কিন্তু তিনি বাসায় উনার ওয়াইফ বা অন্য কাউকে বলেননি। বাজারে যাওয়ার পথে তিনি দেখলেন ফুটপাতে বেঞ্চে বসে দু'জন দাবা খেলছে। তিনিও সেখানে বসে পড়লেন। একজন খেলোয়ার উনার আগ্রহ দেখে তাঁকে খেলতে সুযোগ করে দিলেন।

শুরু হলো খেলা। খেলা চলতেই থাকলো, চলতেই থাকলো। দাওয়াত দেওয়া মেহমানদের দুপুরের খাবারের কথা, বাজার করার কথা তিনি বেমালুম ভুলেই গেলেন। খেলা ছেড়ে কারও ওঠার কোনো নাম গন্ধও নেই। দু'জনেই বুঁদ হয়ে খেলায় মত্ত হয়ে রইলো। অবশেষে খেলা যখন শেষ হলো ততোক্ষণে বিকেল তিনটা বেজে গেছে। উনি আর বাজারে না গিয়ে খালি ব্যাগ নিয়েই বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।

আর এদিকে মেহমানরা ১২ টার দিকে উনার বাসায় আসলেন। উনার ওয়াইফ তাঁদেরকে চা- নাস্তা দিলেন। মেহমানগণ মোতাহার সাহেব কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানালেন, কোথায় গেছে কিছুতো বলে যায়নি, বাহিরে কোথাও গিয়েছে বোধ হয়। কখন যে আসে কে জানে, ছুটির দিনতো। তিনি ভেবেছেন হয়তো আজকে ছুটির দিনে স্বামীর সহকর্মীরা মোতাহার সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে বাসায় এসেছেন এবং যেহেতু তিনি বাসায় নেই চা-নাস্তা খাবার পর হয়তো তাঁরা চলে যাবেন কিন্তু মেহমান তো যাচ্ছে না। তিনিও কিছুটা অস্বস্থি বোধ করতে লাগলেন। মেহমানরা বুঝতে পারলো যে কোথাও একটা গোলমাল হয়েছে, বাসায় তো তাদের জন্য মনে হচ্ছে না খাবার দাবারের কোনো আয়োজন হচ্ছে, তাই তারা নিজেদের মধ্যে সলা পরামর্শ করে একজন কিছুটা ইতস্ততার সাথে বললেন, ভাবী মোতাহার সাহেব তো আমাদের এই চার জনকে আজকে আপনাদের বাসায় দুপুরে খাবারের জন্য দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি কি কিছু বলেননি আপনাকে। এ কথা শুনে মিসেস মোতাহার কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললেন, উনি তো আমাকে কিছুই বলেননি, মনে কিছু করবেন না ভাই, আপনারা একটু বসেন, আমি ব্যবস্থা করছি। এই বলে তিনি রান্না ঘরের দিকে দৌঁড়ালেন। এই হলো দাবাড়ুদের অবস্থা।

হুমায়ূন সাহেবের তেমনটা না হলেও হয়তো না জেতার একটা জেদ মনে কাজ করে থাকতে পারে। কারণ জগতে কেউই হারতে চায় না, সবাই জেতার চেষ্টা করে। খেলা চলতেই লাগলো। অবশেষে যখন ২টা বেজে গেলো, আমি তাঁকে বললাম, স্যার ২ টা তো বেজে গেছে লাঞ্চ করবেন না। উনি কিছুটা হতচকিত হয়ে বললেন, ২টা বেজে গেছে ? ওহ্হো ! বাসায় তো নিশ্চয়ই সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে এক সাথে লাঞ্চ করবে বলে।

এরপর তিনি খেলার ইতি ঘটিয়ে ভগ্নিপতির বাসার দিকে রওনা দিলেন এবং সাথে আমিও উনাকে মেইন রোড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলাম। উনি বললেন লাঞ্চ খেয়ে তাড়াতাড়িই চলে আসবেন।

 

 


share:
Today
প্রিন্ট নিউজ
...
বিজ্ঞাপন
সময়
সর্বশেষ
➤ বৃষ্টির আভাস থাকলেও গরমে বাড়তে পারে অস্বস্তি
➤ বিকেলে সংসদে উঠছে সাইবার নিরাপত্তা বিল
➤ ব্যবসায়ীর পৌনে ২ কোটি টাকা ছিনিয়ে নিলো প্রজন্মলীগ নেতা
➤ চিকিৎসা শেষে আজ দেশে ফিরছেন ড. মোশাররফ
➤ নিখোঁজের দুইদিন পর সেপটিক ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ
➤ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্বিতীয় দিনে প্রায় ২২ লাখ টাকার টোল আদায়
➤ কুমিল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট থেকে স্ত্রী-মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে গৃহকর্তার মৃত্যু
➤ এশিয়া কাপে ফিরছেন লিটন, যোগ দিবেন আজ রাতেই
➤ নিজের সন্তানকে শতক উৎসর্গ শান্তর
➤ বাংলাদেশ-আফগান ম্যাচের খবর জানতে চাইলেন ফুটবল কোচ
➤ কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ
➤ সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা পেলেন আইজিপি
➤ কুমিল্লায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গান-বাজনার পরিবর্তে কোরআন খতম
➤ কুমিল্লায় সম্পতি নিয়ে সংঘর্ষে নিহত- ২, আহত ৫
➤ ‘প্রিয়তমা’ দেখে শাকিব খানকে জড়িয়ে ধরলেন রাষ্ট্রপতি
➤ পরীমণিকে পেছনে ফেললেন সাকিব আল হাসান
➤ ফখরুলের পর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন আব্বাস
➤ তামিমকে যে বার্তা দিলেন সাকিব
➤ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন মির্জা ফখরুল
➤ মেসির জাদুতে এবার ইউএস ওপেনের ফাইনালে মায়ামি
➤ তৃতীয় সন্তানের বাবা হলেন তাসকিন
➤ বাংলালিংকের নেটওয়ার্কে মিলবে টেলিটক সিমে
➤ ট্রানজিট ভিসায় ওমরার সুযোগ বাংলাদেশিদের
➤ সেপ্টেম্বরের শুরুতে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করবে ইসি
➤ সংসদ নির্বাচন ঘিরে জঙ্গিগোষ্ঠীকে উস্কানি দিচ্ছে বিএনপি: কাদের
© All rights reserved © 2022 swadeshjournal.news
Design & Developed by : alauddinsir