শুক্র গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 18 Jun 2022, 5:46:17 PM

আমাদের চেনা পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কমতি নেই! সম্প্রতি শুক্র গ্রহ এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের আশা জাগিয়েছিল। হাওয়াই এবং চিলির আটাকামায় টেলিস্কোপ ব্যবহার করে একদল বিশেষজ্ঞ শুক্র গ্রহে মেঘের আস্তরণ পর্যবেক্ষণ করেন। এতে তারা ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এই গ্যাস পৃথিবীতে জীবিত প্রাণীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবী করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর প্রতিবেশী এ গ্রহের মেঘে জীবসত্তা ভাসছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।জ্যোতিবিজ্ঞানীরা বলেছেন, শুক্রর বায়ুমন্ডলে ফসফিন নামের এক ধরনের গ্যাসের সন্ধান পেয়েছেন তারা। বিবর্ণ এই গ্যাসের গন্ধ রসুন এবং পঁচে যাওয়া মাছের গন্ধের মতো। পৃথিবীতে সাধারণত এটি প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া অথবা ক্ষয়ে যাওয়া জৈব পদার্থ থেকে উৎপন্ন হয়। এর জীবাণুগুলো পেঙ্গুইন এর মতো প্রাণীর অন্ত্রে ও কম অক্সিজেন আছে এমন জলাবদ্ধ পরিবেশে থাকে। এই গ্যাস শিল্প কারখানায় তৈরি করা যায়, কিন্তু শুক্র গ্রহে কোনো কারখানা নেই এবং নিশ্চিতভাবেই নেই পেঙ্গুইন। তাহলে কেনো গ্যাসটি সেখানে? এমন প্রশ্ন থেকেই প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন গবেষকরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বাইরে প্রাণের উপস্থিতির সবচেয়ে চমৎকার আলামত দেখতে পেয়েছেন তারা। প্রসঙ্গত ফসফরাস ও হাইড্রোজেন মিশে ফসফিন নামক রাসায়নিক যৌগ তৈরি হয়। পৃথিবীতে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিক ভাবেই ফসফরাস ও হাইড্রোজেনের মিলন ঘটিয়ে এই গ্যাস তৈরি করে। শুক্র- পৃষ্ঠের ৫০ কিলোমিটার উপরে জমাট মেঘের মধ্যে এই বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি এই গ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে প্রাণ থাকলেও তারা অণুজীব বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সৌরজগতের মধ্যে প্রাণের সন্ধান বহুদিন ধরেই করা হচ্ছে। কখনো মঙ্গল, কখনো বা শনি, বৃহস্পতির কোনও কোনও উপগ্রহকে নিয়েও আশা জেগেছে। কিন্তু উষ্ণ ও বিষাক্ত গ্রহ শুক্রে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভবই নয় বলে ধারণা ছিল। এবার সেই গ্রহ ঘিরেই জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাবনা জেগে উঠলো। গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আণবিক জ্যোতির্পদার্থবিদ ক্লারা সুসা-সিলভা বলেন,শুক্র গ্রহ সম্পর্কে আমরা এই মুহূর্তে যা জানি এবং ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্বের যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা যা হতে পারে, তা হচ্ছে সম্ভবত সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, যদি এটা ফসফিন হয়, তবে সেখানে প্রাণ আছে। আর তা যদি হয়, তবে শুধু শুক্র গ্রহে নয়, এই সৌরমণ্ডলে আরও অনেক প্রাণ রয়েছে। শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে সূর্যের অনেক কাছে বলে এর তাপমাত্রা অনেক বেশি। এর পৃষ্ঠে ৪৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো তাপমাত্রায় কোনো জীবের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখেন না বিজ্ঞানীরা। তবে শুক্রের পৃষ্ঠ ছাড়িয়ে অনেক উপরে যেখানে কিনা তাপমাত্রা পৃথিবীর মতোই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস,সেখানে ফসফিন গ্যাসের এই আবরণের পেছনে কোনো অনুজীবের অবদান উড়িয়ে দিতে পারছেন না তারা। কারডিফ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেন গ্রিভস বলেছেন, এই পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও জীবনের সন্ধান পেতে আমি পুরো ক্যারিয়ার আগ্রহী ছিলাম। তাই এমন সম্ভাবনা দেখে সত্যিই আমি বিস্মিত। কিন্তু হ্যাঁ আমাদের গবেষণায় কোথায় ঘাটতি আছে তা বলার জন্য লোকজনকে উৎসাহিত করছি। যদিও গবেষকরা জানাচ্ছেন, শুক্রে প্রাণের ব্যাপারে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময় ধরে রাসায়নিক ও ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা। তবে শুধু ফসফিনই শুক্রে প্রাণ ধারণের অনুকূল পরিবেশের পক্ষে যথেষ্ট কিনা, তার কিনারা করতে এখনও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।
share:
