'জ্যোতিঃ পাল তুমি শতাব্দীর ইতিহাস

স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 5 Feb 2023, 10:37:46 AM

image06

পিন্টু সরকার

 সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথের ১৯১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার, লাকসাম উপজেলারকেমতলী নামক গ্রামে এক বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চন্দ্রমনি সিংহ,মাতার নাম দ্রৌপদী বালা সিংহ। তিনি পিতা-মাতার কনিষ্ঠতম সন্তান। তিনি বাংলাদশের বৌদ্ধদের ১০তম ধর্মীয় গুরু। 

তিনি ১৯২৬ সালে প্রব্রজিত হন। ১৯৩৮ সালে উপসম্পদা লাভ করেন। তাঁর উপাধ্যায় ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাস্থ জোবরাপাড়া নিবাসী খ্যাতিমান সাংঘিক ব্যক্তিত্ব উপসংঘরাজ গুনালঙ্কার মহাথের।

তিনি উপসম্পদা লাভের পর বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনে জ্ঞান লাভের জন্য পালি সাহিত্য চর্চা ও বিদর্শন ধ্যান সাধনা শুরু করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে – কর্মতত্ত্ব পুগ্‌গল পঞ্‌ঞক্রতি, মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী, বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামে, বোধিচর্যাবতার, সাধনার অন্তরায়, বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা, সৌম্য সাম্যই শান্তির কারণ, প্রজ্ঞাভূমি নির্দেশ, ভারতে বৌদ্ধধর্মের উত্থান পতন, চর্যাপদ, বুদ্ধের জীবন ও বাণী, উপসংখরাজ গুর্ণালংকার মহাস্থবির, রবীন্দ্র সাহিত্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, ভক্তি শতকম ইত্যাদি। তাঁর কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, উপাধি ও পদবী। তন্মধ্যে এশীয়ান বুড্ডিস্ট কনফারেন্স ফরপিস কর্তৃক এশীয়া শান্তিপদক, মিয়ানমার সরকার কর্তৃক ‘অগ্‌গমহাসদ্ধম্ম জ্যোতিকাধ্বজ’, সদ্ধর্ম রক্ষায় বিরল অবদানের জন্য বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ১৯৭৪ সালে ‘মহাশাসনধর’, উপাধি প্রাপ্ত হন। এছাড়াও আবুরখীল জনকল্যাণ সমিতি কর্তৃক ‘মহাধর্মনিধি’। বিশ্ব শান্তি, প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদানের কারণে ১৯৯৫ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংগঠন জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি মানবতা ও নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে অমূল্য অবদানের জন্য তাঁকে ‘বিশ্বনাগরিক’ উপাধি প্রদান করেন। এই দুর্লভ উপাধি প্রাপ্তিতে তিনি হয়ে গেলেন বিশ্বজনীন বিশ্বনন্দিত ধর্মগুরু। এই উপাধি দ্বারা তিনি নিজে ও পুরো বাঙালি জাতিকে গর্বিত করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে বিশেষ পুরস্কার ‘একুশ পদক’ লাভ করেন। এখানে বলাবাহুল্য যে তাঁর কর্ম জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল তিনি একজন সর্বত্যাগী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হওয়ার পরও মাতৃভূমিকে স্বাধীন করা ও দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি ১৯৭১ সালে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে। তবে অস্ত্র হাতে নয়। উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ভালোবাসা ও একান্ত সান্নিধ্যের কারণে এদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, জাপান, কম্বোডিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান ইত্যাদি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রে সফর করেছিলেন। জাতির এই ভয়াবহ দুর্দিনে ভারতে আশ্রয় নিয়ে তিনি সেখানে বাঙালি ও ভারতবাসিকে সংগঠিত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলেন।

আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর দীপ্ত পদচারণায় আমরা আরো দেখতে পাই যে, ১৯৭১ সালে ও পরবর্তীতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বদেশ গড়তে ও সদ্বর্মের কল্যাণ সাধনে তিনি একাধিকবার গমন করেছিলেন ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, চীন, জাপান, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, আমেরিকা, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার ইত্যাদি রাষ্ট্রে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যান্তরে ১৯৮২ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিশ্বশান্তি প্যাগোডা প্রতিষ্ঠা করেন। দৃষ্টি নন্দন, অতি মনোরম, মনোমুগ্ধকর ছায়া সুনিবিড় স্নিগ্ধ সবুজ, শান্ত পরিবেশে এই বিশ্বশান্তি প্যাগোডার অবস্থান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁর জীবনাবসান পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ টি বছর তিনি এ বিশ্বশান্তি প্যাগোডাতে অবস্থান করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই প্যাগোডায় গত ৩৮ বছরে দেশ ও বিদেশের প্রায় চল্লিশ হাজার কৃতী শিক্ষার্থীবৃন্দ সেখানে অধ্যয়ন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। 

 এই মহাপুরুষ ২০০২ সালের ১২ই এপ্রিল ৯২ বছর বয়সে মারা যান। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। গত  ৫ই জানুয়ারি  ছিল এই মহা মানবের ১১২ তম জন্মদিন।জন্মদিনের শুভ ক্ষনে  এই মহামানবের  প্রতি রইল অতল শ্রদ্ধা...


Share

বিজ্ঞাপন
© All rights reserved © 2022 swadeshjournal.news Design & Developed by : alauddinsir