মিনিকেট - স্লিম সুশ্রী কিন্তু হারামজাদা
স্বদেশ জার্নাল → প্রকাশ : 17 Oct 2022, 5:39:39 PM
মাসুক আলতাফ চৌধুরী
স্লিম,সুশ্রী তাই আমাদের প্রেম। গভীর ভালবাসা ২০ -২৫ বছর ধরে। একটা ব্রান্ড,ভাবসাব অন্যরকম। উচ্চ,মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তের ভাত। একচেটিয়া একনম্বরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু এবার ধরা। খাদ্য মন্ত্রী বলেছেন নিষিদ্ধ হচ্ছে মিনিকেট চাল। কারণ এটি হারামজাদা,বেজাত- জন্ম জাত নেই,শুধুই রুপান্তর । এ নামে কোন ধান নেই। রুপের টানে আমাদের আসক্তি। এতে ঠক হচ্ছে,প্রেমের লাভ-ক্ষতি আবার কি। পুষ্টিগুণ কমে গিয়েও শুধু স্লিম হওয়ায় আমাদের খাবার টেবিল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শরীরের জন্যে ঝুঁকি- এখানেই বেঁধেছে বিপত্তি। এবার মনে হয় ব্রেকাপের পালা। কারণ কর্তা নিজেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। অবশ্য আরেকবারও ২০১৫ তে হই-চই পরেছিল। এরপর যথারীতি নিশ্চুপ। এবার ভোক্তা অধিকারও ক্ষেপেছে।আমজনতাও চায়। হবেই মনে হচ্ছে।
দেশে বিপুল হাইব্রিড ধান হয়,কিন্তু বাজারে ওই নামে চাল নেই। মোটা বলে কদর কম। দেখতেও চকচকে নয়। ওই স্লিম ফিট ওয়ার কাজটিই করে বড় বড় ক্র্যাসিং মিল- চাল কল। ৭ ধাপে চলে স্লিমিং ও সুশ্রী প্রক্রিয়া। প্রথমে জাতে তোলা- কলো চাল ও পাথর সরানো, এরপর রুপ পরিবর্তন- বাদামি আবরণ তুলে ফেলা, এরপর রূপচর্চা- কেমিক্যাল মিশিয়ে সাদাকরণ,ক্রাসিং,কাটিং,স্ট্রিমিং, পলিশ। এবার বাজারে বিপণণ, মার মার কাট কাট- বিক্রি। স্মার্ট ব্রান্ডিং নেইম- মিনিকেট। এটাকেই জাত ভেবে আমরা অস্থির। যাকে এখন বলা হচ্ছে প্রতারণা।
মূলত ধান তিন ধরণের- আউশ,আমন,বোরো। যার অর্ধেকেরও বেশি বোরো জাতের। যার সংক্ষেপ-স্মার্ট পরিচয় 'ব্রি' হিসেবে। কিন্তু আধুনিক জীবন-ব্যবস্থা একে পাত্তা দেয় নি, গ্রামিণ লেবাসেই রেখেছে- তাই বাজারে ব্রি- ২৮, ২৯, নামে কোন চাল নেই। উত্তরবঙ্গে বসবাস মোটার বাবারা সবাই ফন্দি এঁটে- একজোট- ৮ শতাধিক চালকল। ব্রি (বিআর) ২৮,২৯,৩৯ স্লিম সুশ্রী হয়ে মিনিকেট নামধারণ করে ঠক দিচ্ছে আমাদের। দামও দ্বিগুণ। বাটপারির মধ্যেই আমরা পরে আছি ২০ -২৫ বছর।
কর্তার স্বাস্থ্যঝুঁকি। এইটাই এবার বড় কথা। অতিরিক্ত কাট-ছাঁট আর পলিশে কিছু ধানের পুষ্টি উপাদান একেবারেই কমে যায়, কোন কোন চালে শুধু শর্করাই থাকে বাকি। প্রোটিন,জিংক,আয়রন,মিনারেল,ভিটামিন অন্যান্য খাদ্য ক্যালরি সব উধাও।
শুরুর স্বীকৃতি এরকম,১৯৯৫'র দিকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের নতুন জাতের চিকন 'শতাব্দী' ২৫ কেজি ধান বীজ ও ৫ কেজি কীটনাশকসহ ' মিনি কিটস' বিতরণ করে ভারত সরকার। ওই ধান ভারত থেকে বেড়াতে আসে লাগোয়া যশোরে। সংসার বিস্তার শুরু। বংশ ছড়ায় পাশের জেলাগুলোতেও- কুষ্টিয়া, নওগাঁ । দেশিয় নাম পরে মিনিকেট।
এ স্বভাবের আরও চাল বাজারে আছে। স্বাদের বাসমতি। জাতধান বাংলামতি(ব্রি-৫০)। ব্রি-৪৯ সেজেগুজে পাজাম ও নাজিরশাইল। এই হারামজাদাদের তালিকাও ছোট নয়। কলো জিরা,চাষী,স্বর্ণা আরও আরও।
তবে খাওন ওয়ালাদের- আমজনতার অপরাধ নেই। কারণ তারা সরল মনে খেয়েছেন। প্রেমের ব্যাপারটা চোখ ও মনের, সামাজিকতার। তারা হারামখোর হবেন না। ফতুয়া মিললো। সুবিধা পেয়ে নড়েচড়ে বসে এবার বলবেন ওই ব্যাটাদের ধর। হবে না। ক্রেতা সাবধান নীতি। আপনি জানলেন না কেন। ওটাই আইন। খামোখা প্যাঁচ কইরেন না। কর্তারা এক থাকেন। প্রেম শেষ। এবারে ব্রেকাপ। পাক্কাপাক্কি।
লেখক: সাংবাদিক, সাবেক সভাপতি, কুমিল্লা প্রেসক্লাব
share:
